ডিজিটাল মার্কেটিং কি? ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা

ডিজিটাল মার্কেটিং কি

ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং এটির প্রয়োজনীয়তাই বা কি? এই প্রশ্নটি এখন সবার। উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সবাই এখন ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে জানতে চায়। বর্তমান যুগ ডিজিটাল মার্কেটিং এর যুগ। এখন ঘরে বসে অনলাইনে কেনা কাটা থেকে শুরু করে, অনলাইনে ইনকাম করা সবটাই এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর নির্ভর করে।

ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে মানুষ মূলত সোশ্যাল মিডিয়ায় পন্যের বিজ্ঞাপনকেই বুঝে। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা কি তাই? আসুন আজকের এই আর্টিকেল থেকে আমরা জানার চেষ্টা করি, ডিজিটাল মার্কেটিং কি এবং এর সাথে আরো কি কি ব্যাপার জড়িত আছে।

ডিজিটাল মার্কেটিং কি? 

ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে- ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে কনজিউমারের কাছে পন্যের জানান দেওয়ার একটি পন্থা। মার্কেটিং এর কাজ মূলত মানুষের নিকট পন্য সঠিক সময়ে পৌঁছে দেয়া বা জানান দেয়া। বর্তমানে মানুষ বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে থাকে অনলাইনে। করোনাকালীন সময়ে তার স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুন। এই বিশাল পরিমানের অডিয়েন্সের সামনে আপনার পন্য সম্পর্কে তুলে ধরার সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং।

যদি আরও সহজে বলতে চাই, ডিজিটাল মার্কেটিং হচ্ছে প্রোডাক্ট মার্কেটিং এর একটি দিক যেটি ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস, সোসাল মিডিয়া, ইন্টারনেট এর সাথে সম্পৃক্ত।

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন করবেন? 

যেকোন ব্যাবসাকে প্রচার এবং প্রসারের জন্য মার্কেটিং প্রয়োজন। দিন বদলেছে, মার্কেটিং এর ধরন বদলেছে। মার্কেটিং এখন ডিজিটালাইজ হয়েছে। প্রতিষ্ঠান কিংবা পন্য, যেটাই হোক মার্কেটিং ছাড়া গতি নেই।

ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বেশি স্পেসিফিক এবং যেসকল মানুষ শুধু ঐ নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট চান তাদের কাছেই মার্কেটিং করা যায়। যা প্রচলিত মার্কেটে সম্ভব নয়।

প্রচলিত পদ্ধতিতে কোন প্রোডাক্টের মার্কেটিং করতে গেলে ব্যবহার করতে হয় প্রিন্ট এড, ফোন কমুউনিকেশন, ফিজিক্যাল মার্কেটিং। তাও খুব সহজে মানুষের নিকট রিচ করা যায় না যতটা যায় অনলাইনের মাধ্যম। প্রচলিত মার্কেটিং এর আরো বড় ধরনের সমস্যা হচ্ছে এটাতে প্রচুর পরিমানে টাকা ব্যয় হয়। এক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং যেন একটি ত্রাতা হয়ে আসলো। খুব সহজে যদি কেউ তার টার্গেটেড অডিয়েন্সের নিকট পৌছাতে চান, ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিকল্প নেই তাহলে।

ডিজিটার মিডিয়া ব্যবহার করে অডিয়েন্সের ইন্টারেস্ট অনুযায়ী এড শো করানো যায়, যেটি ফিজিক্যাল মার্কেটিং এ করা অসম্ভবপর। আর যদিও করা যায় তাও অত্যাধিক ব্যয় বহুল।

ফিজিক্যাল মার্কেটিং করতে গেলে দেখা যায় একসাথে অনেক গুলো মানুষের সামনে কোন একটা এড শো করানো হচ্ছে বা প্রিন্টিং এড দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, উপস্থিত সকলে কিন্তু এই প্রোডাক্টটি সম্পর্কে সমান আগ্রহ দেখায় না। যেটি আশাও করা যায় না। এক্ষেত্রে হয় কি, যাদের প্রোডাকটি সম্পর্কে কৌতুহল রয়েছে তারাই মুলত প্রোডাক্টিভ মার্কেটিং এর আওতায় পড়েন। বাদ বাকি যারা আছেন তাদের কাছ থেকে কোম্পানি আশা করার তেমন কিছু থাকে না। আগ্রহ প্রকাশ করেন না এমন লোকের সংখ্যা যত বেশি হবে তত বেশি মার্কেটিং ব্যার্থ হবে।

কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এ এটির কোন সুযোগ নেই। যদি আপনি ভালো কোন এজেন্সির নিকট হতে মার্কেটিং করাতে পারেন তাহলে আপনার প্রায় প্রতিটি এড টার্গেটেড অডিয়েন্সের কাছে রিচ করবে। মানে এড গুলো স্পেসিফিক তাদের কাছে শো করবে যারা মুলত আগ্রহ দেখান উক্ত পন্যের সম্পর্কে। এটি হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপসমূহ

ডিজিটাল মার্কেটিং এর অনেকগুলো ধাপ আছে। যেগুলো প্রয়োগ করে মূলত ডিজিটাল মার্কেটাররা বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে ডিজিটাল মার্কেটিং করে থাকেন। নিচের লিস্টে আপনি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো ধাপ সম্পর্কে জানতে পারবেন। আসুন লিস্টটা দেখে নেই।

  1. এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
  2. এসইএম বা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
  3. কন্টেন্ট মার্কেটিং
  4. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং বা এসএমএম
  5. এফিলিয়েট মার্কেটিং
  6. ইমেইল মার্কেটিং
  7. ই-কমার্স প্রোডাক্ট মার্কেটিং
  8. সিপিএ মার্কেটিং

ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?

বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং একটি অপরিহার্য অংশ। কারণ মানুষ এখন যেকোন পণ্য ক্রয় করার আগে ইন্টারনেটে ওই পন্য সম্পর্কে জেনে বুঝে তারপর ক্রয় করে। তাছাড়া মানুষ এখন দোকানে ঘুরে ঘুরে না কিনে, অনলাইন থেকেই বেশিরভাগ কেনা কাটা করে থাকে।

তাই আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হন, তাহলে আপনার উচিত ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে নিজের ব্যবসাকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া। আসুন আমরা বর্তমান যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তাগুলো জেনে নেই।

  • সমগ্র বিশ্বে মোট প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। আর এই সংখ্যাটি নিয়মিতভাবে বেড়ে চলেছে। মানুষ যত বেশি ইন্টারনেটে ব্যবহার করবে তত বেশি মানুষের সামনে আপনি আপনার পণ্যের মার্কেটিং করতে পারবেন। আর ইন্টারনেটে পণ্যের মার্কেটিং এ ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব কতখানি তা আপনি আমাদের উপরের আলোচনা পড়লেই বুঝতে পারার কথা।
  • বর্তমান বিশ্বে মোট প্রায় ৫.১১ বিলিয়ন মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আর এই সংখ্যা খুবই দ্রুত গতির সাথে বেড়ে চলেছে। এখন অনেক মানুষ আছে যারা একাধিক মোবাইল ব্যবহার করেন তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ঠিক রাখার জন্যে। আর এই মোবাইল ফোন হচ্ছে ক্রেতার তথ্য কালেকশনের অন্যতম মাধ্যম। কারণ প্রায় সকল মোবাইল ব্যবহারকারীই ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। তাই এই ব্যবহারকারীর সংখ্যা যত বাড়বে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে।
  • আপনি জেনে অবাক হবে যে, একটা স্ট্যাটিসটিক্সের মাধ্যমে ইউজার সার্ভে রিপোর্ট উল্লেখ করেছে যে, প্রায় ৮৪% বিক্রেতা, মার্কেটার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করে ক্রেতার তথ্য সংগ্রহ করার জন্যে।
  • এছাড়া আরো একটি সার্ভে রেজাল্ট দেখিয়েছে যে, সারা বিশ্বে ৫৫% মানুষ যেকোন পন্য ক্রয়ের জন্যে সামাজিক মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। মানে হচ্ছে, তারা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে তাদের পছন্দের পণ্য সম্পর্কে তথ্য এবং রিভিউ জানতে পারে। আর ক্রেতা যার প্রেজেন্টেশন ও পণ্যকে পছন্দ করবে তার কাছ থেকে অনলাইনের মাধ্যমেই ক্রয় করে ফেলে।
  • ৪৩% ই-কমার্স ক্রেতা গুগলে সার্চ করে তাদের পছন্দের ই-কমার্স ওয়েবসাইটে আসে।
  • বিশ্বে প্রায় ৫১% ক্রেতা তাদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা অনলাইন থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে করে থাকে। এই সংখ্যাটিও দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।
  • ৭০% ক্রেতা যেকোন পণ্য কেনার আগে ইন্টার্নেটে সার্চ দিয়ে সেই পণ্য সম্পর্কে যাচাই বাছাই করেন। পণ্যটি পচ্ছন্দ হলে সাথে সাথেই ঘরে বসেই অনলাইনে অর্ডার করে ফেলেন।
  • আরো একটি মজার ব্যাপার হচ্ছে, ৮২% ক্রেতা মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যেই বিক্রেতার সাথে তাদের লাইভ চ্যাটের মাধ্যমে কথা বলতে চান।

আপনি হয়ত এখন কিছুটা হলেও বুঝতে পারছেন, আপনার ক্রেতারা কিভাবে অনলাইনে তাদের কেনাকাটা সম্পন্ন করেন। তাই আপনি যদি এই ডিজিটাল যুগে, ডিজিটাল মার্কেটে টিকে থাকতে চান, তাহলে আপনার এখনই ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে ভাবা উচিত।

কারণ আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী কিন্তু বসে নেই, সে কিন্তু তার ব্যবসাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছেন। Coca-Cola, Unilever, Nestlé এর মতো বড় বড় কোম্পানীগুলোও কিন্তু বেশ তোড়জোড়ের সাথেই বর্তমানে ডিজিটাল দুনিয়াতে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

আসুন এখন আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করি।

ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ কি?

দেখুন, বর্তমান বিশ্বের বাজার ব্যবস্থা যেভাবে ডিজিটাল ইন্ডাস্ট্রিতে রূপ নিচ্ছে। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যখন মানুষ আর দোকানে কিংবা বাজারে গিয়ে পণ্য কেনা বন্ধ করে দিবে। তারা সবকিছু অনলাইনেই কিনে নিবে। কারণ ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবনযাত্রা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে।

আর মানুষ সময় নষ্ট করে বাজারে গিয়ে পণ্য যাচাই বাছাই করার থেকে অনলাইনে যেকোন পণ্য সম্পর্কে সার্চ করে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা জেনে নিতে পারে। আর পছন্দ হলে সেই পণ্য একটি বিশ্বাসযোগ্য বিক্রেতার কাছ থেকে অনলাইনের মাধ্যমেই কিনে নিতে পারে।

আর এই অনলাইন বাজার ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ওপর নির্ভরশীল। আপনি যদি এখনই নিজেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এ দক্ষ করে না তুলতে পারেন, তাহলে আপনি এই বাজার ব্যবস্থায় টিকে থাকতে পারবেন না। কারণ আপনার পণ্য সম্পর্কে যদি মানুষ অনলাইনে জানতেই না পারে, কিংবা আপনার পণ্য যদি অনলাইনে কিনতে না পারে, তাহলে কোন ক্রেতাই আপনার পণ্য কিনবে না।

আপনি যদি ভবিষ্যতে আপনার ব্যবসাকে সফল হিসাবে দেখতে চান তাহলে এখনি সময়। এখনি উত্তম সময়, নিজেকে এবং নিজের ব্যবসাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর আওতায় নিয়ে এসে, ক্রেতার সামনে আকর্ষনীয়ভাবে নিজের পণ্যকে তুলে ধরার।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *