নাম শুনেই নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন যে, এটি প্রযুক্তি সম্পর্কিত। পরমাণু ও অণু এই নাম দুইটি আমরা জানি। তো, পারমাণবিক ও আণবিক স্কেলে অতি ক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুনভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানকে বলা হয় ন্যানো টেকনোলজি। অন্যভাবে বলা যায়, ন্যানো (Nano) শব্দটির আভিধানিক অর্থ (Dwarf). যার অর্থ ( বামন বা জাদুকরী ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ)। ন্যানো (Nano) শব্দটি গ্রিক শব্দ ন্যানোস (Nanos) থেকে এসেছে। ন্যানো হচ্ছে একটি পরিমাপের একক। এটি কতটা ছোট তা কল্পনা করা কঠিন।
1 মিটার এর 100 কোটি ভাগের এক ভাগ হলো 1 ন্যানোমিটার। ১ ন্যানোমিটার= 10′-৯ মিটার। আর এ ন্যানো মিটার স্কেলের সাহায্যে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানোটেকনোলজি বলা হয়। ন্যানোটেকনোলজি হচ্ছে এমন বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি যা পরিচালিত হয় ন্যানো স্কেলে যেটি 1 থেকে 100 ন্যানোমিটার হয়ে থাকে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে অনু পরমাণু কে ভাঙলে জোড়া লাগিয়ে আগামী দিনে অনেক কিছু করা সম্ভব। জাপানের জাতীয় গবেষণা বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় করা হয় ন্যানোটেকনোলজি ক্ষেত্রে। রিচার্ড ফাইনম্যানকে ন্যানোপ্রযুক্তির জনক বলা হয়।
ন্যানো টেকনোলজি কিভাবে আমাদের উপকারে আসে?
অদ্ভুত হলেও সত্য আপনার প্রশ্নটিও আপনি ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে করেছেন।
কম্পিউটার বা মোবাইল হলো ন্যানো টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি করা ডিভাইস। আশাকরি ধারনা করতে পারছেন যে কতদিক থেকে ন্যানো টেকনোলজি আমাদের কাজে আসে। চলুন দেখি ন্যানো টেকনোলজি ব্যাপারটা কি ?
পারমাণবিক বা আণবিক স্কেলে অতিক্ষুদ্র ডিভাইস তৈরি করার জন্য ধাতব বস্তুকে সুনিপুণভাবে কাজে লাগানোর বিজ্ঞানকে ন্যানো টেকনোলজি বলে। ন্যানো শব্দটি গ্রিক Nanos শব্দ থেকে এসেছে যার আভিধানিক অর্থ Dwarft কিন্তু এটি একটি মাপের একক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। রিচার্ড ফাইনম্যান (Richard Feynman) কে ন্যানো প্রযুক্তির জনক বলা হয়।
১ মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগকে বলা হয় ১ ন্যানো মিটার। আর এ ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি সম্পর্কিত সেগুলোকেই ন্যানো টেকনোলজি বলে।
ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগক্ষেত্রঃ
১। কম্পিউটার হার্ডওয়্যার তৈরি
২। ন্যানো রোবট
৩। ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রপাতি
৪। জালানি তৈরিতে
৫। প্যাকেজিং ও প্রলেপ তৈরি
৬। ঔষধ তৈরি
৭। খেলাধুলার সামগ্রী
৮। মহাকাশ অভিযান
৯। বস্ত্র শিল্প
১০। কৃত্তিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি
ন্যানো টেকনোলজির সুবিধা
১। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ইলেকট্রনিক যন্ত্র অধিক মজবুত ও টেকসই, আকারে তুলনামূলক ছোট এবং ওজনে হালকা ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী।
২। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগে উৎপাদিত ঔষধ “স্মার্ট ড্রাগ” ব্যবহার করে প্রাণঘাতী ক্যান্সার ও দুরারোগ্য ব্যাধি হতে দ্রুত আরগ্য লাভ করা যায়।
৩। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগের ফলে খাদ্যজাত পণ্যের গুণাগুণ রক্ষা ও স্বাদ বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছে।
৪। ন্যানো ট্রান্সজিস্টর, ন্যানো ডায়োড, প্লাজমা ডিসপ্লে, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং ইত্যাদি ব্যবহারের ফলে ইলেকট্রনিক শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন হচ্ছে।
৫। ন্যানো প্রযুক্তি দ্বারা ফুয়েল সেল, সোলার সেল ইত্যাদি তৈরির মাধ্যমে সস্তায় শক্তি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে।
৬। পানি ও বায়ু দূষণ রোধ সম্ভব হচ্ছে।
৭। ন্যানো টেকনোলজির প্রয়োগের ফলে উৎপাদিত ন্যানো রোবট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে কার্যকরীভাবে ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে।
ন্যানো টেকনোলজির অসুবিধা
১। ন্যানো টেকনোলজি দিয়ে সার্কিট তৈরির প্রধান সমস্যা হল, স্থির বিদ্যুৎ। সাধারণ ইলেক্ট্রিক সার্কিটের মধ্যে এই স্থির বিদ্যুৎ থেকে সার্কিট কে রক্ষা করার ব্যবস্থা থাকে। যদি তা না করা হত, তাহলে কোন কারণে স্থির বিদ্যুৎ বৈদ্যুতিক সরঞ্জামকে নষ্ট করে দিত। কিন্তু ন্যানোটেকনোলজির ক্ষেতে বৈদ্যুতিক সার্কিট কল্পনাতিত ছোট হয়ে যায় বলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে রক্ষা করা সম্ভব নয়। প্রকৃতপক্ষে ছোট সার্কিটে স্থিরবিদ্যুত প্রায় ১৫০০০ সেন্টিগ্রেড এর মত তাপ সৃষ্টি করে। এই তাপে সার্কিট এর উপকরণ গলে, সেই সার্কিটটিকে নষ্ট করে দিতে পারে। এই কারণে ১৯৯৭ এর পরে IC সার্কিটে গতানুগতিক ভাবে ব্যবহৃত এলুমিনিয়ামের পরিবর্তে তামা ব্যবহৃত হয়। কেননা তামার গলনাঙ্ক ১০৮৩ যেখানে এলুমিনিয়ামের গলনাঙ্ক ৬৬০০ সেন্টিগ্রেড। ফলে অধিক তাপমাত্রাতেও তামা এ্যালুমিনিয়ামের তুলনায় ভাল কাজ করবে।
২। এই প্রযুক্তি অধিক ব্যয়বহুল।। ফলে এই প্রযুক্তির প্রয়োগে উৎপাদিত পন্য ব্যয়বহুল।
৩। ন্যানো-পার্টিকেল মানব-শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
৪। বর্তমানে ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার করে ক্ষতিকর অস্ত্র তৈরি করা হচ্ছে ইত্যাদি।